বর্তমানে মানুষ বিশ্রামবহুল (বসে কাজ করা) জীবনধারণ প্রণালীতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে অল্প সংখ্যক লোক নিয়মিত কায়িক শ্রম বা শ্রমসাধ্য কাজ করে থাকেন। বেশীর ভাগ মানুষ তাদের জীবনধারণ প্রণালীতে নূন্যতম দৈহিক শ্রমসাধ্য কাজ করেন না, ব্যায়াম তো নয়ই। এর পরিবর্তে অনেকের থাকে খারাপ খাদ্যাভ্যাস, যেমনঃ অতিরিক্ত চিনি, চর্বি ও তেলযুক্ত খাবার, ভাজা খাবার, ফাষ্টফুড বা জাংক ফুড, সফ্ট ড্রিঙ্কস বা হার্ড ড্রিঙ্কস।
হৃদরোগ, অ্যাজাইনা বা বুকে ব্যাথা, রক্তবাহী নালীতে ব্লক, অ্যাথেরোস্কেলোরোসিস বর্তমান যুগে পরিচিত রোগ। এর জন্যে দায়ী রক্তের চর্বি, যেমনঃ কলেস্টেরল, ট্রাই গ্লিসারাইড ও এন.ডি.এল-এর মাত্রা বেড়ে যাওয়া। রান্নার তেল উৎপাদনকারী সংস্থাগুলো সাধারণ মানুষকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করছে, তাদের পন্য নিরাপদ অর্থাৎ ক্ষতিকারক নয় এবং এগুলো হচ্ছে কলেস্টেরল শূন্য বা জিরো কলেস্টেরল সমৃদ্ধ তেল।
একথা সত্য, রান্নার তেল তেলবীজ অর্থাৎ উদ্ভিজ্জ থেকে প্রস্তুত এবং এতে কলেস্টেরল থাকে না। প্রকৃতপক্ষে কলেস্টেরল আসে রেড-মিট, মগজ, কলিজা, মাংসের চর্বি, দুধের সর, ঘন দুধ, ডিমের কুসুম ইত্যাদি ইত্যাদি থেকে। অনেকেই এই বিষয়টি বুঝতে অসমর্থ হন, এ উদ্ভিজ্জ তেলগুলোও শরীরে প্রবেশ করে ক্ষতিকারক চর্বিতে পরিণত হতে পারে। এ তেলে উচ্চ পরিমাণে ক্যালরি থাকে (১ গ্রাম = ৯ ক্যালরি), যা গ্রহণ হতে পারে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, স্তুলতাসহ নানাবিধ বিপাকীয় রোগ। এ রোগ থেকে বেঁচে থাকার সবচেয়ে ভাল উপায় হল আমাদের খাদ্যাভ্যাসে চর্বিজাতীয় পদার্থের পরিমাণ নূন্যতম করা।
জেনে রাখা ভাল, প্রতিটি খাদ্যে অদৃশ্য ফ্যাট বা লুকানো চর্বি থাকে, তাই খাদ্য থেকে নূন্যতম চর্বি গ্রহণ করতে হবে। এর অর্থ হল সব রকমের দৃশ্যমান চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন করা উচিৎ। এখন প্রশ্ন হল কিভাবে তেল ছাড়া সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুত করা যায়? কি হবে যদি তেল ছাড়া খাদ্য প্রস্তুত করা যায়? এমন খাবার কি সুস্বাদু হবে? যদি যুক্তি সঙ্গত ভাবা যায় তাহলে উত্তর হবে ‘হ্যাঁ’। খাদ্যের বিভিন্ন স্বাদ আসে বিভিন্ন ধরণের মশলা থেকে। রান্নার তেল নিজে কোন স্বাদ যোগ করে না। আসলে ওটা মন গড়া ধারণা, যা আমাদের অনেক বছর থেকে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে, সুস্বাদ আসে তেল থেকে।
ঢাকা শহরের বেশ কিছু স্কুল থেকে পাওয়া উপাত্ত থেকে দেখা গেছে, আমাদের সন্তানদের মোটা হবার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে এসব শিশুদের ক্ষতিকর রোগব্যাধির ঝুঁকি অনেক গুণে বেড়ে যাচ্ছে। সুতরাং সুস্থ থাকতে হলে আমাদের রান্নার তেল ব্যবহার কমাতে হবে এবং প্রয়োজনে তেলছাড়া খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।